গৌতম বুদ্ধের জীবনী - Gautam Buddha Biography in Bengali Pdf Download
গৌতম বুদ্ধের জীবনী - Gautam Buddha Biography in Bengali Pdf Download
গৌতম বুদ্ধ - Gautam Buddha Biography in Bengali
[খ্রিঃ পূঃ ৫৬৩-৪৮৩]
গৌতম বুদ্ধ |
প্রাচীন ভারতে বর্তমান নেপালের অন্তর্গত হিমালয়ের পাদদেশে ছিল কোমল রাজ্য। রাজ্যে রাজধানী কপিলাবস্তু। কোশলের। অধিপতি ছিলেন শাক্যবংশের রাজা শুদ্ধোধন। শুদ্ধোধনের সুখের সংসারে একটি মাত্র অভাব ছিল। তাঁর কোন পুত্রসন্তান ছিল না। বিবাহের দীর্ঘদিন পর গর্ভবতী হলেন জ্যেষ্ঠা রানী মায়াদেবী। সে কালের প্রচলিত রীতি অনুসারে সন্তান জন্মাবার সময় পিতৃগৃহে যাত্রা করলেন মায়াদেবী ।। পথে লুম্বিনী উদ্যান। সেখানে এসে পৌছতেই প্রসব বেদনা উঠল রানীর। যাত্রা স্থগিত রেখে বাগানেই আশ্রয় নিলেন সকলে। সেই উদ্যানেই জন্ম হল বুদ্ধের । যিনি সমস্ত মানবের কল্যানের জন্য নিজেকে উৎসগং করেছিলেন, তিনি রাজার পুত্র হয়েও কোন
রাজপ্রসাদে জন্মগ্রহণ করলেন না, মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে নীল। আকাশের নাচে আবিভূর্ত হলেন। পুত্র জন্মাবার কয়েক দিন পরেই মারা গেলেন মায়াদেবী। শিশুপুত্রের সব ভার নিজের হাতে তুলে নিলেন খালা মহাপ্রজাপতি। শিশুপুত্রের নাম রাখা হল। সিদ্ধার্থ । রাজা শুদ্ধোধন জ্যোতিষীদের আদেশ দিলেন শিশুর ভাগ্য গণনা করতে। তারা সিদ্ধার্থের ভাগ্য গণনা করে বললেন, এই শিশু একদিন পৃথিবীর রাজা হবেন। যে দিন এ জরাজীর্ণ বৃদ্ধ মানুষ, রােগগ্রস্ত মানুষ, মৃতদেহ এবং সন্ন্যাসীর দর্শন পাবে সেই দিনই সংসারের সকল মায়! পবিত}{গ করে গৃহত্যাগ করবে। চিন্তিত হয়ে পড়লেন শুদ্ধোধন। মন্ত্রীরা পরামর্শ দিলেন এই শিশুকে সুখ, বৈভব আর বিলাসিতার স্রোতে ভাসিয়ে দিন, তাহলে এ আর কোনদিন গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী হবে না।
বৌদ্ধধর্ম |
Gautam Buddha Biography in Bengali
স্বতন্ত্র প্রাসদেই স্থান হল রাজপুত্র সিদ্ধার্থের । যেখানে কোন জরা ব্যাধি মৃত্যুর প্রবেশ করার অধিকার নেই। ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠলেন সিদ্ধার্থ। যৌবনে পা দিতেই রাজা শুদ্ধোধন তাঁর বিবাহের আয়ােজন করলেন। সম্ভ্রান্ত বংশীয় সুন্দরী কিশাের যশােধরার সাথে বিবাহ হল সিদ্ধার্থের ।
বিবাহের পর কিছু দিন আনন্দ উৎসবে মেতে রইলেন সিদ্ধার্থ। যথাসময়ে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হল। তার নাম রাখা হল রাহুল। সন্তানের জন্মের পর থেকেই পরিবর্তন শুরু হল সিদ্ধার্থের । একদিন পথে বের হয়েছেন এমন সময় তাঁর চোখে পড়ল এক বৃদ্ধ। অস্থিচর্মসার, মাথার সব চুলগুলাে পেকে সাদা হয়ে গিয়েছে। মুখে একটিও দাত নেই। গায়ের চামড়া ঝুলে পড়েছে। লাঠিতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছিল। বৃদ্ধকে দেখামাত্রই রথ থামালেন সিদ্ধার্থ। তার সমস্ত মন বিচলিত হয়ে পড়ল-মানুষের একি ভয়ঙ্কর রূপ?
ভারাক্রান্ত মনে প্রাসাদে ফিরে গেলেন সিদ্ধার্থ। কয়েক দিন পর হঠাৎ সিদ্ধার্থের চোখে পড়ল । একটি গাছের তলার শুয়ে আছে একজন মানুষ। অসুস্থ রােগগ্রস্ত, যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছে। | বিমর্ষ হয়ে পড়লেন সিদ্ধার্থ। তাহলে তাে যৌবনেও সুখ নেই। যেকোন মুহর্তে ব্যাধি এসে সব সুখ কেড়ে নেবে। কিছু দিন পর সিদ্ধার্থের চোখে পড়ল রাজপথ দিয়ে চলেছে এক শবযাত্রা! জীবনে এই প্রথম মৃতদেহ দেখলেন প্রিয়জনদের কান্নায় চারদিক মুখর হয়ে উঠেছে। বিস্মিত হলেন সিদ্ধার্থ-কিসের এই কান্না? সারথী চন্ন বলল, প্রত্যেক মানুষের জীবনের পরিণতি এই মৃত্যু। মৃত্যুই জীবনের শেষ তাই প্রিয়জনকে চিরদিনের জন্য হারাবার বেদনায় সকলে কাঁদছে।
আনমনা হয়ে গেলেন সিদ্ধার্থ। এক জিজ্ঞাসা জেগে উঠল তার মনের মধ্যে। মৃত্যুই যদি জীবনের অন্তিম পরিণতি হয় তবে এই জীবনের সার্থকতা কোথায়? রাজপ্রসাদের সুখ ঐশ্বর্য বিলাস সব তুচ্ছ হয়ে গেল সিদ্ধার্থের কাছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হল এই জরা ব্যধি মৃত্যুর হাত থেকে কে তাঁকে মুক্তির সন্ধান দেবে? আকস্মাৎ দেখা হল এক সন্ন্যাসীর সাথে । সিদ্ধার্থ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন আপনি। এই সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন?
আপনারা পড়ছেন গৌতম বুদ্ধের জীবনী
সন্ন্যাসী বললেন, আমি জেনেছি সংসারের সব কিছুই অনিত্য। জরা, ব্যাধি, মৃত্যু যেকোন মুহূর্তে জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই আমি যা কিছু অবনিশ্বর চিরন্তন তারই সন্ধানে বার হয়েছি। আমার কাছে সুখী-দুঃখী জীবন-মৃত্যু সব এক হয়ে গিয়েছে। সিদ্ধার্থ সকলের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলেন। দিবারাত্র চিন্তার মধ্যে হারিয়ে গেলেন। সকলের অগােচরে গভীর রাতে নিজের কক্ষ ত্যাগ করে বেরিয়ে এলেন সিদ্ধার্থ। পেছনে পড়ে রইল স্ত্রী যশােধরা, পুত্র রাহুল, পিতা শুদ্ধোধন, মহাপ্রজাপতি। অশ্বশালায় ঘুমিয়ে ছিল সারথী চন্ন। তাকে ডেকে তুললেন সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থকে রথে নিয়ে চললেন চন্ন। নগরের সীমানা পার হয়ে, জনপদ গ্রাম পার হয়ে রাজ্যের সীমানায় এসে দাঁড়ালেন। এবার সারথী চন্নকে বিদায় দিতে হবে। নিজের সমস্ত অলংকার রাজবেশ খুলে উপহার দিলেন চন্নকে। তারপর বললেন, তুমি পিতাকে বলাে আমি যদি কোনদিন জরা ব্যধি মৃত্যুকে জয় করতে পারি তবে আবার তাঁর কাছে ফিরে আসব। আমি মানুষকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে। আলাের পথ দেখাতে চাই।
চলতে চলতে অবশেষে সিদ্ধার্থ এসে পৌঁছলেন রাজগৃহ। তখন রাজগৃহ ছিল কোথাও কোন জনমানব নেই, চারদিক নির্জন, শুধু পাখির কুজন আর বয়ে চলা বাতাসের শব্দ। ভাল লেগে গেলে সিদ্ধার্থের । তিনি স্থির করলেন এখানেই বিশ্রাম গ্রহণ করবেন । ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল পাহাড়ের ছােট ছােট গুহায় ধ্যানমগ্ন হয়ে আছেন সব সাধুরা। একটি গুহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন। সিদ্ধার্থ। সেই গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন আলাড়া নামে এক সাধু। সিদ্ধার্থ গুহার অদূরে বসলেন।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তুলিতে সিদ্ধার্থের মহাভিনিষ্ক্রমণ |
আলাড়ার ধ্যান ভঙ্গ হতেই সিদ্ধার্থ তার কাছে গিয়ে নিজের পরিচয়, গৃহত্যাগের কারণ বর্ণনা করে বললেন, আমি মুক্তির পথের সন্ধান করছি। আপনি আমাকে বলে দিন কোন পথ ধরে অগ্রসর হলে আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। সেখানেই রয়ে গেলেন সিদ্ধার্থ । একটি গুহায় তিনি বাসস্থান করে। নিলেন। সমস্ত দিন ধ্যান বেদপাঠ শাস্ত্রচর্চার মধ্যে অতিবাহিত হত।
দিন কেটে যায়। গুরু আলাড়ার কাছে শিক্ষা পেয়ে অনেক কিছু জ্ঞানলাভ করেছেন সিদ্ধার্থ কিন্তু তার অন্তরে যেন অতৃপ্তি রয়ে যায়। নতুন গুরুর সন্ধানে বার হলেন সিদ্ধার্থ। এবার এলেন উদ্দাক নামে এক সাধুর সান্নিধ্যে। দীক্ষা নিলেন তাঁর কাছে। সেই একই জীবনচর্চা। শাস্ত্রপাঠ জপ-যজ্ঞএতে বাইরের আড়ম্বর আছে কিন্তু অন্তরের স্পর্শ নেই। সিদ্ধার্থ উপলব্ধি করতে পারলেন যে, জ্ঞান, পরম সত্যের অন্বেষণ তিনি করছেন, কোন সাধুই তার সন্ধান জানেন না। হতাশায় ভেঙে পড়লেন। তিনি অনুভব করলেন তার পথের সন্ধান অপর কেউ তাকে দিতে পারবে । অন্ধকারের মধ্যে তাকেই খুঁজে বার করতে হবে আলাের দিশা। ঘুরতে ঘুরতে এসে উপস্থিত হলেন উরুবেলা নামে এক নগর প্রান্তে। যেখানে পাঁচজন সাধু বহুদিন তপস্যা করছিলেন। সিদ্ধার্থের আসার উদ্দেশ্য শুনে তারা বলল, তুমি তপস্যা কর। সিদ্ধার্থ জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন করে আমি তপস্যা করব? দিন-রাত্রি একই আসনে বসে ধ্যান করে চলেন। এত আত্মনিগ্রহ করেও যে প্রজ্ঞা জ্ঞানের সন্ধান করছিলেন তার কোন দিশা পেলেন না সিদ্ধার্থ। মনে হল যাকে তিনি উপলব্ধি করতে চাইছেন, সে পরম সত্য যেন ধরা দিতে গিয়েও দূরে সরে যাচ্ছে। | সিদ্ধার্থ স্থির করলেন আর আত্মনিগ্রহের পথে তিনি অগ্রসর হবেন না। কাছেই এক গ্রামে ছিল একটি মেয়ে, নাম সুজাতা। ধর্মপ্রাণ ভক্তিমতী । প্রতি বছর সে মনের কামনা পূরণের আশায় বৃক্ষ দেবতার কাছে পূজা দিত। বুদ্ধ চলতে চলতে এসে পৌঁছলেন সেই পাঁচ সাধুর কাছে। তারা সকলেই কঠোর সাধনায় নিমগ্ন হয়েছে। বুদ্ধকে দেখামাত্রই তাঁরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ল। বুদ্ধ তাঁদেয়সামনে গিয়ে বললেন, তােমরা এই আত্মনিগ্রহের পথ ত্যাগ কর। এই কৃচ্ছসাধনাও যেমন প্রজ্ঞা লাভের প্রতিবন্ধক তেমনি ভােগসুখ বিলাসের মধ্যেও সত্যকে জানা যায় না। ধীরে ধীরে পাচজন সাধুর মন থেকে সব সংশয় দূর হয়ে গেল। তারা উপলব্ধি করল তথাগত বুদ্ধই তাদের জীবনে আলাের দিশারী হয়ে এসেছেন। বুদ্ধ তাদের একে একে ধর্মের উপদেশ দিতে লাগলেন। তার উপদেশ শােনবার পর পাঁচজন সাধু বলল, আপনি আমাদের দীক্ষা দিন, আজ থেকে আমরা আপনার শিষ্য হব। বুদ্ধ তাদের দীক্ষা দিয়ে শিষ্য হিসেবে বরণ করে নিলেন। দেখতে দেখতে অল্প দিনের মধ্যেই বুদ্ধের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
You are reading Gautam Buddha Biography in Bengali Pdf Download
প্রাচীন ভারতে বৈদিক ধর্মে মূর্তিপূজা না থাকলেও ছিল যাগযজ্ঞ আচার-অনুষ্ঠানের বাড়াবাড়ি। ব্রাহ্মণরা ছিল সমাজের সবকিছুর চালক। বুদ্ধের ধর্মের মধ্যে ছিল মানুষের প্রতি ভালবাসা করুণা প্রেম। তাই মানুষ সহজেই তার ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন।
এতদিন পুরােহিত ব্রাহ্মণরা মানুষকে বলত একমাত্র তারাই পারে মানুষকে মুক্তি দিতে। বুদ্ধ বললেন, অন্য কেউ তােমাদের মুক্তি দিতে পারবে না। তােমাদের জীবনচর্চার মধ্যেই আছে। তােমাদের জীবনের সুখ-দুঃখ। মানুষ নিজেই যেমন তার দুঃখকে সৃষ্টি করে তেমনি নিজের চেষ্টার – মধ্যে দিয়েই সব দুঃখ থেকে নিজেকে উত্তীর্ণ করতে পারে। তুমি সৎ জীবন যাপন কর, পবিত্র আচরণ। কর। অন্তরকে শুদ্ধ কর, উদার কর। সেখানে যেন কোন কলুষতা না স্পর্শ করতে পারে। দলে দলে মানুষ আসতে আরম্ভ করল তার কাছে। তিনি তাদের কাছে বললেন, অষ্টমার্গের কথা।
প্রথম হচ্ছে সত্য বােধ-অর্থাৎ মন থেকে সকল ভ্রান্তি দূর করতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে নিত্যও অনিত বস্তুর মধ্যে প্রভেদ। দ্বিতীয় হচ্ছে সংকল্প-সংসারের পার্থিব বন্ধন থেকে মুক্ত হবার আকাঙ্ক্ষা। যা কিছু পরম জ্ঞান তাকে উপলব্ধি করার জন্য থাকবে গভীর আত্ম সংযমের পথ বা সঙ্গ শিষ্যদের জন্য। কিন্তু তিনি তাঁর প্রখর বাস্তব চেতনা দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, সাধারণ গৃহী মানুষ কখনােই এই অষ্টমার্গের পথকে সম্পূর্ণ অনুসরণ করতে পারবে না। তিনি সমগ্র মানব সমাজের জন্য দশটি নীতি প্রচলন করলেন
গৌতম বুদ্ধের নীতি
১. তুমি কোন জীব হত্যা করবে না।
২ অপরের জিনিস চরি করবে না ।
৩. কোন ব্যভিচার বা অনাচার করবে না।
৪. মিথ্যা কথা বলবে না, কাউকে প্রতারণা করবে না।
৫. কোন মাদক দ্রব্য গ্রহণ করবে না।
৬. আহারে সংযমী হবে। দুপুরের পর আহার করবে না।
৭. নৃত্যগীত দেখবে না।
৮. সাজসজ্জা অলঙ্কার পরবে না।
৯. বিলাসবহুল শয্যায় শােবে না।
১০. কোন সােনা বা রূপা গ্রহণ করবে না।
এই দশটি উপদেশর মধ্যে প্রথম পাঁচটি ছিল সাধারণ মানুষের জন্য। আর সন্ন্যাসীর ক্ষেত্রে দশটি উপদেশই পালনীয়। বুদ্ধের এই উপদেশ জনগণের মধ্যে প্রচার করার জন্য তার ষাট জন বিশিষ্ট শিষ্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। এবার বুদ্ধ তার কয়েকজন শিষ্যকে নিয়ে রওনা হলেন গয়ার পথে। ই বুদ্ধ তার কয়েকজন শিষ্যকে নিয়ে রওনা হলেন কপিলাবস্তুর পথে। মহারাজ শুদ্ধোধনের মনে ক্ষীণ আশা জেগে ওঠে, হয়ত পুত্র তার রাজ্যের ভার গ্রহণ করবে। বুদ্ধ নগরে প্রবেশ করতেই বৃদ্ধ পিতা ছুটে গেলেন তাঁর কাছে। কিন্তু এ তিনি কাকে দেখলেন! পরনে পীতবস্ত্র, একদিকে কাঁধ অনাবৃত। মস্তক মুণ্ডন। হাতে ভিক্ষাপাত্র। তিনি ভিক্ষাপাত্র হাতে নগরের মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইছেন। যে কিনা সমগ্র রাজ্যের যুবরাজ সে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে দ্বারে ভিক্ষা করছে। লজ্জায় ক্ষোভে মাথা নত করলেন শুদ্ধোধন। বুদ্ধ এগিয়ে এলেন পিতার কাছে। এসে তাকে প্রণাম করে বললেন, আপনি হয়ত পুত্রস্নেহ অনেক ব্যথিত হয়েছেন। মন থেকে এই মায়া আপনি দূর করুন। এই জগৎ অনিত্য।
রাজা শুদ্ধোধন উপলব্ধি করলেন তার সম্মুখে যে দাঁড়িয়ে আছে সে তার পুত্র নয়, মহাজ্ঞানী মানবশ্রেষ্ঠ তথাগত বুদ্ধ। পুত্রকে নিয়ে রাজপ্রসাদে গেলেন। প্রাসাদের অন্তঃপুরে বসেছিলেন যশােধারা। তিনি ভাবলেন যতক্ষণ না বুদ্ধ তাঁর কাছে আসে, তিনি কোথাও যাবেন না। | বুদ্ধের হৃদয় যশােধারার সাথে সাক্ষাতের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। তিনি দু’জন শিষ্যকে নিয়ে অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। বুদ্ধকে দেখামাত্রই উঠে এলেন যশােধারা। তার পরনে কোন রাজবেশ নেই। কোন অলঙ্কার নেই। গৃহে থেকেও সন্ন্যাসিনী। বুদ্ধের পায়ের উপর লুটিয়ে পড়লেন। যশােধারা। বুদ্ধ তাঁকে শান্ত করে বললেন, হে আমার পুত্রের জননী, আমি জানি তুমিও জন্ম জন্মান্তর ধরে সৎ পবিত্র জীবন যাপন করছ, তাই আমি তােমাকে মুক্তির পথ দেখাতে এসেছি। আমি তােমাকে যে উপদেশ দেব তুমি সেই পথ অনুসরণ কর, তবেই জীবনের সব মায়া বন্ধনের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে। আর সেখানে অপেক্ষা করলেন না বুদ্ধ। | পরদিন বুদ্ধ নগরে বেরিয়েছেন ভিক্ষাপাত্র হাতে। এমন সময় প্রাসাদের অলিন্দে দাঁড়িয়ে যশােধারা তাঁর পুত্র রাহুলকে বললেন, ঐ যে দিব্যকান্তি পুরুষ পথ দিয়ে চলেছেন উনি তােমার পিতা। যাও | ওর কাছ থেকে গিয়ে তােমার উত্তরাধিকার চেয়ে নাও। পুত্র রাহুল গিয়ে দাঁড়াল বুদ্ধের সামনে। তাঁকে প্রণাম করে বলল, আমি তােমার পুত্র। তুমি আমাকে আমার উত্তরাধিকার দাও।
এবার এলেন তার ভাই আনন্দ। আনন্দ প্রজাপতির পুত্র। তিনি বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। সকলকে নিয়ে বুদ্ধ কপিলাবস্তু ত্যাগ করে এলেন শ্রাবস্তী নগরে। এখানে তাঁর থাকবার জন্য অনাথ পিণ্ডক নামে এক ধনী। বণিক জেতবনে এক মঠ নির্মাণ করে দিলেন। একদিন কপিলাবস্তু থেকে মহাপ্রজাপতির দূত এর বুদ্ধের কাছে। তারা সংসার জীবন ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করে সঙ্গে আশ্রয় নিতে চান। তার সাথে যশোধারা ও আরাে অনেকেই সন্ন্যাস গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু বুদ্ধ নারীদের সন্ন্যাস গ্রহণকে মেনে নিতে পারলেন না। তিনি যাতা মহাপ্রজাপতির অনুরােধ করতে ফিরিয়ে দিলেন।'?
অবশেষে - Conclusion
আনন্দ ছিলেন বুদ্ধের প্রধান শিষ্য। আনন্দের অনুরােধে বুদ্ধ বললেন, বেশ তাহলে তাদের সঙ্গে প্রবেশ করার অনুমতি দিলাম। তবে সঙ্রে নিয়ম ছাড়াও আরাে আটটি নিয়ম তাদের মেনে চলতে হবে। মাতা মহাপ্রজাপতি বুদ্ধের সমস্ত নিয়ম মেনে চলার অঙ্গীকার করলেন। বুদ্ধ অনুমতি দিলেও নারীদের এই সংঘে প্রবেশ করার বিষয়টিকে কোন দিনই অন্তর থেকে সমর্থন করতে পারেননি। | বুদ্ধ আনন্দকে বললেন, যদি নারীরা সঙ্ েপ্রবেশ না করত তবে বৌদ্ধ ধর্ম হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের বুকে রয়ে যেত। কিন্তু নারীরা প্রবেশ করার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই আমার প্রবর্তিত সব নিয়ম-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। বুদ্ধের এই আশঙ্কা সত্য বলেই পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছিল। | জীবনের দিন যতই শেষ হয়ে আসছিল ততই মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। বিশেষত বর্ষার | প্রকোপেই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তেন।
জীবনের অন্তিম পর্বে (বুদ্ধ তখন আশি বছরে পা দিয়েছেন) বুদ্ধ তার কয়েকজন শিষ্য নিয়ে এলেন হিরণ্যবতী নদীর তীরে কুশীনগরে । ঘুরতে ঘুরতে এসে দাড়ালেন এক শালবনের নিচে। আনন্দ গাছের নিচে বিছানা পেতে দিলেন। সামান্য কয়েকজন শিষ্য | সেখানে দাড়িয়েছিল। তারা সকলেই উপলব্ধি করতে পারছিলেন ভগবান তথাগত এবার তাদের | ত্যাগ করে যাবেন। এবার আনন্দকে কাছে ডাকলেন বুদ্ধ। বললেন, আমি যখন থাকব না, আমার উপদেশ মত চলবে- আমার উপদেশই তােমার পথ নির্দেশ করবে। |
বুদ্ধদেব তার কোন উপদেশ লিপিবন্ধ করে যাননি। তাঁর মৃত্যুর পর বৌদ্ধ স্থবির শ্ৰমণরা মিলিতভাবে তাঁর সমস্ত উপদেশ সংকলিত করেন। এই সংকলিত উপদেশই ত্রিপিটক নামে পরিচিত। ত্রিপিটক বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বুদ্ধ শেষ বারের মত শিষ্যদের কাছে ডেকে তাদের উপদেশ দিলেন তারপর গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন। সে ধ্যান আর ভাঙল না। |
বৌদ্ধদের মতে বুদ্ধ দেহত্যাগ করেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৪ সালে।
কিন্তু আধুনিক কালের ঐতিহাসিকদের মতে বুদ্ধের মহাপ্রয়াণ ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৬ বা ৪৮৩।
0 Response to "গৌতম বুদ্ধের জীবনী - Gautam Buddha Biography in Bengali Pdf Download"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন